সিমলাপাল রাজবাড়ীর চাঁচর উৎসব।
সিমলাপাল রাজবাড়ীর চাঁচর উৎসব।
চাঁচর উৎসব।
দোলের আগের দিন রাত্রিতে রাধা কৃষ্ণ কে চৌদলের উপর চাপিয়ে কোথাও কোথাও আবার কৃষ্ণ এবং বলরাম কে চৌদলের উপর চাপিয়ে ভক্তগনের দ্বারা নাম সংকীর্তন করে ভগবান কে নগর /গ্রাম ভ্রমণ করানোর উৎসব কে চাঁচর উৎসব বলা হয়। এই সময় ভগবান প্রত্যেক ভক্তের ঘরের সামনে উপস্থিত হন এবং এবং ভগবান কে নৈবিদ্য অর্পণ করা হয়।
পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল রাজবাড়ীর দোল উৎসবের ‘ট্র্যাডিশন’-ই ছিল দোলের আগের দু’দিন কৃষ্ণ-বলরামের চাঁচর উৎসব । এই দু’দিন ভক্তদের কাঁধে ভর করে চৌদলে চড়ে রাতে নগর পরিক্রমা করতেন কৃষ্ণ-বলরাম। রাতের আঁধার দূর করতে নগর পরিক্রমায় জ্বালানো হত হ্যাজাক লাইট । কাতারে কাতারে মানুষ সেই শোভা যাত্রায় থাকতেন। সেই খুশিতে দোলের দু’দিন আগে থেকেই বাতাসে নানা রঙের ফাগ উড়ে বেড়াত সিমলাপালের আকাশে-বাতাসে। বর্তমানে প্রায় দু’দশক হতে চলল সেই শোভাযাত্রা বন্ধ। নগর পরিক্রমার বদলে এখন রাজবাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরের আটচালা পর্যন্ত এই যাত্রা করিয়ে কোনও মতে প্রথাটাকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।
পূর্বে এই শোভাযাত্রাকে ঘিরে সিমলাপাল ও এবং সিমলাপালের পার্শ্ববর্তী জড়িষ্যা গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্মাদনা কম ছিল না। সবাই নিজের নিজের বাড়ির সামনের রাস্তা টি জল দিয়ে ঝাড়ু মেরে পরিষ্কার করতেন । গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ইট-মাটি দিয়ে একটি বেদি গড়া হত ঠাকুরের জন্য। আলপনা এঁকে সাজানো হত বেদি। অনেকে বেদিতে ছড়িয়ে দিতেন আবির। রাস্তার এপার থেকে ওপার টাঙানো হতো আম পল্লব।
এই সাজ সাজ রবের মধ্যে চাঁচর উৎসব (ভগবানের নগর /গ্রাম ভ্রমণ ) শুরু হত সন্ধ্যার পরে। প্রথম দিন কৃষ্ণ-বলরাম কে সিমলাপাল নগর পরিভ্রমণ করানো হত। পরের দিন কৃষ্ণ-বলরাম কে নিয়ে যাওয়া হতো পাশের জড়িষ্যা গ্রামে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুজো নিতেন কৃষ্ণ-বলরাম। হরিধ্বনী দিয়ে ঠাকুরকে স্বাগত জানাতেন গৃহস্থ। ভগবানের এই যাত্রা উপলক্ষে সুন্দর একটি শোভাযাত্রা বের হত গ্রামের রাস্তায়, যার আগেভাগে থাকত হ্যাজাকের আলো, নাম সংকীর্তনের দল ,পরবর্তীকালে ব্যান্ডপার্টিও যুক্ত হয়েছিল এই শোভাযাত্রায়।
তবে চৌদল কাঁধে তোলার অধিকার ছিল শুধু উৎকল ব্রাহ্মণদেরই। তবে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষই পা মেলাতেন শোভাযাত্রায়। বর্তমানে নগর পরিভ্রমণ ও বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রথা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দোলের দিন নাম সংকীর্তন হয় । সাধারণ মানুষ ফাগ ছড়িয়ে দেন কৃষ্ণ-বলরামের গায়ে। মহাকালের নিয়ম অনুসারে যুগ এগিয়ে চলেছে পিছনে পড়ে রয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু ,সেগুলো আমাদের কাছে আজ শুধু স্মৃতি আর নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস। এই কাহিনীতে লুকিয়ে আরো একটি ইতিহাস, সেটি হলো কৃষ্ণ বলরামের জড়িষ্যা গ্রামে আসার ইতিহাস।যার জন্য কৃষ্ণ বলরামের জড়িষ্যা গ্রামে আগমন হয়েছিল, তিনি আজ স্বর্গবাসী,আজ তিনি ও এক ইতিহাস।
প্রবীর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রবীরের বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।